মুক্তিযুদ্ধে রাজবাড়ী সদর
১৯৭১সাল ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি পরিষ্কার ভাষায় নির্দেশ দিলেন “এরপর যদি একটা গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর।’’ এই ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই সারা দেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। রাজবাড়ীতে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি শুরম্ন হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। যুদ্ধের ট্রেনিং শুরু হয় রাজবাড়ী রেলওয়ে মাঠে। ১৯৭১সালে ২১শে এপ্রিল ভোর ৫টার সময় পাকবাহিনী গান বোট এর মাধ্যমে পদ্মা নদী পার হয়ে, গোয়ালন্দ ঘাট অতিক্রম করে নারার টেগ ও মমিন খাঁ এর ঘাট দিয়ে রাজবাড়ী শহরে প্রবেশ করে। এই খবর নিমিষে রাজবাড়ী শহর ও গ্রামগঞ্জ ছাড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ তখন শহর থেকে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিতে থাকে। আর বিহারীরা অস্র নিয়ে শহর নেমে পড়ে। পাক বাহিনী রাজবাড়ী শহরে ঢোকার সময় রাসত্মার আশে-পাশের বাড়ী ঘর পুড়িয়ে দেয়। ১৯৭১সালে সে সময়কার এম.এন.এ কাজী হেদায়েত হোসেন এর বাড়ীও পাক বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এসময় পাক বাহিনী বাজারের মধ্যে বড় বড় দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। তখন রাজবাড়ী শুধু আগুন আর আগুন এর শহর। সে সময় পাকবাহিনী ও বিহারীরা অজস্র নর-নারী রাজবাড়ীতে হত্যা করে। রাজবাড়ীতে হতে অনেকে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। ভারতে উচ্চতর ট্রেনিং শেষ করে অস্রশস্র্র নিয়ে ১১জনের একটি গ্রুপ ভারতের বর্ডার পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাকাউল আবুল হাসেম, প্লাটন কমান্ডার তাঁর গ্রুপ নিয়ে রাজবাড়ী শহর থেকে ৩/৪ মাইল ভিতরে রশোড়া গ্রামে মুক্তি বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। তাঁর পাশে আরোও একটি ক্যাম্প ছিল, জলিল মিয়ার ক্যাম্প । পাঁচুরিয়ায় ছিল ইসলাম কমান্ডারের ক্যাম্প, নদীতে ছিল কামরুল হাছান লালন এর ক্যাম্প। মাটি পাড়ায় ছিল মজিব বাহিনীর সিরাজ আহমেদ এর ক্যাম্প। মোটা মুটি রাজবাড়ীতে ৮টি গ্রুপ কাজ করে। তারপরও পাংশা ও কুষ্টিয়া থেকে আরও কয়েকটি গ্রম্নপ এসে রাজবাড়ীতে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। রাজবাড়ীতে অনেক বড় ধরনের যুদ্ধ হয়। কারণ এখানে বিহারী, পাকবাহিনী ও রাজাকার এক হয়ে মুক্তি বাহিনীর বিরূদ্ধে যyুদ্ধ অংশ নেয়। বাংলাদেশ ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হয় অথচ রাজবাড়ী মুক্ত হয় ১৯শে ডিসেম্বর। কারণ বিহারী ও রাজকার বাহিনী আত্নসমর্পণ না করায় রাজবাড়ী শত্রম্নর কবল হতে মুক্ত হতে বিলম্ব হয়। রাজবাড়ীতে সর্ব প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উড়ান আওয়ামী লীগ নেতা নাজিবর রহমান। তাঁর সাথে ছিলেন লতিফ বিশ্বাস , আমজাদ হোসেন, চিত্তরঞ্জন গুহ, ফরিদ আহম্মেদ। মজিব বিল্ডিং এর উপরে ৭ মার্চে মহান স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাজবাড়ী মুক্তি যুদ্ধে যারা শহীদ হন তারা হলেন রাজবাড়ীর আব্দল আজিজ খুশি, আঃ ছাদেক এবং পাংশার আঃ রফিক, আঃ শফিক সহ আরও অনেকে। যুদ্ধে আহত হন বাকাউল আবুল হাসেম, ইলিয়াছ মিয়া, শহিদউদ্দিন, আঃ গফুর ও হাতেম আলী সহ অন্যান্যরা। এই হল রাজবাড়ীর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS